আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় শহিদমিনার ও ৬ দফা
শহিদমিনার ও ৬ দফা
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে পটুয়া কামরুল হাসান এবং সেই সময়ে ছাত্র ও পরে শিল্পী মুর্তজা বশীর, ইমদাদ হোসেন, আবদুর রাজ্জাক, সিরাজী, কাজী আবদুর রউফ, আবদুর সবুর, আমিনুল ইসলাম প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। শিল্পী বিজন চৌধুরী ও মুর্তজা বশীর ভাষা আন্দোলন ও শাসকদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ড্রইং ও কাঠ খোদাই, লিনোকাট মাধ্যমে বেশ কিছু ছবি তৈরি করেছিলেন।
স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী কাজী আবুল কাশেম ‘দোঁপেয়াজা’ ছদ্মনামে ভাষা আন্দোলনবিষয়ক কার্টুন এঁকে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। শিল্পীদের এসব ছবি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, তথা নিজেদের অধিকার আদায়ে জনগণকে জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে ইতিহাসের অংশ। শহিদমিনারের স্থপতিও একজন চিত্রশিল্পী। তিনি শিল্পী হামিদুর রহমান। তাঁকে সেই সময় সহযোগিতা করেছিলেন ভাস্কর নভেরা আহমেদ। ১৯৫৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ।
বাংলাদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন করে চলেছে— তাদের প্রচারে, পোস্টার আঁকা, কার্টুন আঁকা, প্রচারমূলক নানারকম ছবি আঁকা, ফেস্টুন ও ব্যানার তৈরি করা, বক্তৃতা ও আন্দোলনের মঞ্চসজ্জা, সবকিছুতে শিল্পীরা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকতেন।
আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টির মতো প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলসহ, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন এবং সাংস্কৃতিক দল, ছায়ানট, উদীচী ও প্রগতিশীল নাট্যদলগুলোর সঙ্গে থেকে শিল্পীরা তাদের কাজে সহায়তা করতেন। শিশুসংগঠন খেলাঘর ও কচি-কাঁচার মেলার মাধ্যমে চিত্রশিল্পীরা শিশু চিত্রকলা ও অন্যান্য সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে বাংলাদেশের অধিকার আদায় ও নিজেদের শিল্প, সাহিত্য ও ঐতিহ্য বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার লোগো, প্রচারের পোস্টার, মঞ্চসজ্জা করেছিলেন শিল্পী হাশেম খান। প্রতীকী মঞ্চসজ্জার নকশা প্রচ্ছদে ব্যবহার করে দৈনিক ইত্তেফাক ৬ দফার বিষয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করে। ১৯৬৭ থেকে পরপর ৫ বছর ১৯৭১ পর্যন্ত। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চিত্রশিল্পীরা শহিদমিনারে বড় বড় ক্যানভাসে, পূর্ব- পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার, শিক্ষা, বাণিজ্য, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাক- শাসকগোষ্ঠীর বঞ্চনা ও বাঙালিদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ছবি এঁকে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতেন।
চিত্রপ্রদর্শনী শুধু গ্যালারিগৃহে নয়, জনতার জন্য গৃহের বাইরে যেমন- বিদ্রোহী স্বরবর্ণ, এই নামে ১৩টি স্বরবর্ণ, ছড়া ও ছবির একটি প্রদর্শনী জনগণের মধ্যে বিপুল সাড়া তুলেছিল। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে এই Wind ধরনের চিত্রপ্রদর্শনী ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল।
আরও দেখুন :