ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

আজকে আমাদের আলোচনার বিষয় ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

 

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

কাজে লাগবে না বলে অনেক জিনিস আমরা ফেলে দিই। মনে করি আবর্জনা তাই ফেলে দিই, এ ছাড়া আর কী করার আছে? আমরা কদবেল খেয়ে খোলস ফেলে দিই। যেমন- হাঁস-মুরগির মাংস থেকে পালকগুলোকে আমরা আবর্জনা মনে করি। নগণ্য ফেলনা জিনিস আমাদের কল্পনাশক্তি, চিন্তা-ভাবনা এবং সুন্দর জিনিস তৈরির আগ্রহটাকে কাজে লাগিয়ে দেখি না এই ফেলে দেওয়া কদবেলের খোলস, পালক ইত্যাদি দিয়ে সুন্দর কোনো কিছু তৈরি করতে পারি কি না?

কদবেলের খোলস দিয়ে খেলনা বা পুতুল

আমাদের দেশে কদবেল পাওয়া যায়। পাকা কদবেল খেয়ে খোসা আমরা ফেলে দিই। পাকা কদবেলের মুখে ছোট একটি ফুটো করে কাঠি ঢুকিয়ে সাবধানে ভেতরের নির্যাসটুকু বের করে নিয়ে, কদবেলের খোসা আস্ত রাখলে এটা দিয়ে সুন্দর পুতুল তৈরি করতে পারব আস্ত খালি খোসা কয়েকদিন রেখে দিলে শুকিয়ে যাবে। এবার একটি ছুরি দিয়ে আস্তে আস্তে চেঁছে এটিকে মসৃণ করে নিই। এভাবে দুইটি কদবেলের খোসা ঠিক করে নিই।

এরপর একটিতে হলুদ রং (ভার্নিশ কালার করি। অন্যটি পছন্দমতো যে-কোনো রং করি। দ্বিতীয় বলটিতে কিছু বালি অথবা ছোট ছোট কাঁকর দিয়ে ভরে ভারী করি। দ্বিতীয় বলটির উপর প্রথম বলটি আইকা গাম দিয়ে আটকিয়ে দিই। এবার হলুদ বলটিতে চুল, চোখ, মুখ ও ঠোঁট আঁকি এবং অন্য বলটিতে নকশা এঁকে নিই। দেখি কেমন চমৎকার একটি পুতুল তৈরি হয়ে গেল। এটি পড়ার টেবিলে পেপার ওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতে পারি অথবা বন্ধুদেরও উপহার দিতে পারব।

পালক দিয়ে ফুল

হাঁস-মুরগির ছোট সাদা পালকগুলো আলাদা করে পানিতে গোলানো লাল, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদি রঙে চুবিয়ে শুকিয়ে নিই। মুরগির লম্বা সাদা পালকও সবুজ রং করে শুকিয়ে নিতে হবে। কিছু হলুদ রং করে শুকিয়ে রাখি। মুরগির সবুজ, নীল, কালচে সবুজ পালকগুলোও বেছে পরিষ্কার করে রাখি। সামান্য শক্ত এক টুকরো সবুজ রঙের কাগজ নিয়ে এক টাকার কয়েনের সমান গোল একটি চাকতি তৈরি করি।

 

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

কদবেলের খেলনা

সবুজ রঙের উপযুক্ত কাগজ না পেলে সাদা কাগজই রং করে শুকিয়ে নিতে পারি। কাগজের চাকতিটির পরিধি থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত এক জায়গায় কেটে নিই। এবার কাটা এক পাশের ও অপর পাশ তুলে শক্ত আঠা দিয়ে জোড়া দিই। দেখি, চাকতির মাঝখানটায় কোণের মতো গর্ত হয়ে গেল। এবার গর্তের দিকে চাকতির ভেতরে আইকা আঠা লাগিয়ে যে-কোনো এক রঙের ছোট ছোট পালক ফুলের পাপড়ির মতো এক এক করে বসিয়ে দিই।

চারদিক ঘুরিয়ে পালক বসানোর পর দেখি জিনিসটি কেমন সুন্দর ফুলের মতো দেখাচ্ছে। এবার ঝাড়ুর শলা (নারকেলপাতার শলা) বিশ-একুশ সেন্টিমিটার লম্বা করে কাটি। শলার মাথায় আঠা লাগিয়ে হলুদ রঙের তুলা জড়িয়ে এক সেন্টিমিটার ব্যাসের আমলকীর মতো একটি গুটি তৈরি করি। শলার মাথাটি যেন গুটির ভেতরে ঢোকানো থাকে এবং গুটি যেন শলার সাথে শক্ত হয়ে লেগে থাকে।

শলার অপর মাথাটা পালকের ফুলের মাঝাধান দিয়ে ঢুকিয়ে টেনে নিচে নামিয়ে দিই, যাতে তুলার পুটিটি ফুলের পাপড়ির ঠিক মাঝখানে চেপে বসে যায়। বসানোর আগে গুটির নিচের দিকে ভালো করে আইকা আঠা লাগিয়ে পালক দিয়ে ফুল তৈরি করি। এভাবে ফেলনা জিনিস দিয়ে কেটে-হেঁটে আঠা লাগিয়ে অনেক কিছু করা যায়। এবার শলাটির সারা পারে আঠা লাগিয়ে পাতলা সবুজ কাগজ দিয়ে সুন্দর করে সূড়ে নিই।

কাগজে মোড়া হয়ে গেলে সবুজ রঙের কয়েকটি লম্বা পালকের গোড়ার দিকে পেলিনাম বা আইকা আঠা লাগিয়ে শলার সাথে জুড়ে দিই যাতে পালকগুলো পাতার মতো দেখার। সবুজ রং করা পালকের সাথে দুই-তিনটা সবুজ-নীল, কালচে-সবুজ রঙের পালক বসালে খুবই সুদর দেখাবে। এভাবে পালক বসানোর পর পালকের গোড়া ময়দার আঠা লাগানো পাতলা সবুজ কাগজ পেঁচিয়ে ঢেকে দিই।

এবার দেখি পালকের তৈরি ফুল, পাতা ও ডাঁটাসহ কেমন সুন্দর দেখাচ্ছে। এভাবে নানান রঙের ফুল তৈরি করে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখলে খুব সুন্দর দেখাবে। পালক দিয়ে ফুল তৈরি করার একটি পদ্ধতি জানা হলো। এবার নিজেদের বুদ্ধিতে, নিজেদের পছন্দমতো অন্য কোনোরকমের ফুল বা অন্য কোনো জিনিস তৈরি করার চেষ্টা করব।

 

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

পাখির পালক দিয়ে ফুল

পাটের আঁশ বা ঊল দিয়ে সুন্দর একটি হাঁসের ছানা তৈরি

আমরা উল দিয়ে পমপম তৈরি করেছি। ঠিক একই নিয়মে পাটের আঁশ দিয়ে একটি হাঁসের ছানা তৈরি করতে পারি। নিচের ছবি দেখে অনায়াসে হাঁসের ছানাটি তৈরি করতে পারব। মোটা কাগজ যারা না পাবে তারা পুরনো চিঠির পোস্টকার্ড নিয়ে তিন ইঞ্চি ব্যাসের দুইটি গোলাকৃতি এঁকে কেটে নেবে। যত্ন গোলাকৃতি দুটির ঠিক মাঝে ছোট করে গোল এঁকে কেটে বের করি।

এর পর সুই-এর সাহায্যে উল অথবা পাটের আঁশ পরিয়ে গোল চাকতি দুটো একসাথে নিয়ে এমনভাবে বার বার ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ ভরব যেন একটুও ফাঁক না থাকে। এবার কাঁচি দিয়ে চারধার একটু কেটে কাগজের চাকতি দুটোর ফাঁকে একটু শক্ত করে সুতো বা উল দিয়ে বেঁধে নেব। এবার কাগজ ছিড়ে ফেলে দিয়ে একটা অংশ কাঁচি দিয়ে হেঁটে মাথার আকৃতি করি। এবং নিচের অংশ শরীরের কাজ করবে।

(যারা পাটের আঁশ দিয়ে করবে তারা সরু তার ভাঁজ করে একটি সুইয়ের মতো করে নেবে)। এবার কাগজ কেটে চোখ ও ঠোঁট বানিয়ে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেব। চোখের রং কালো ও ঠোঁট হলুদ বা লাল করে দিলে সুন্দর দেখাবে। এবার হাঁসটি তৈরি হয়ে গেলে হাঁসের গলায় সুন্দর সরু ফিতা বেঁধে দিলে আরও সুন্দর দেখাবে।

 

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

 

এভাবে তিনটি হাঁসের ছানা তৈরি করে একটি সেট বানাতে পারি। এটি আমরা বন্ধুদের জন্মদিনে উপহার দিতে পারি বা নিজের ঘরে রেখে সাজাতে পারি। বন্ধুদের উপহার দেবার জন্য আমরা তিনটি পুতুলের সেট তৈরি করে নিতে পারি। একটি বড় ও দুটো ছোট হাঁসের ছানা তৈরি করে একটি হার্ডবোর্ড বা মোটা বোর্ড কাগজ লম্বা করে কেটে, হাঁসের ছানাগুলোর নিচের অংশে আঠা লাগিয়ে পর পর তিনটি ঐ হার্ডবোর্ডে সাজিয়ে নিই।

 

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

ডল বা পাটের আঁশ দিয়ে তুলতুলে হাঁসের ছানা তৈরি ।

ছবিগুলো দেখে আমরা অতি সহজেই এ পুতুলগুলো তৈরি করতে পারি।

ফেলনা উল বা পাটের আঁশ দিয়ে ফুল তৈরি

ফুল সবারই প্রিয়। ফুলের গন্ধ ও সৌন্দর্যে আমাদের সবার মন ভরে যায় এখন একটি ফুল তৈরি করা ‘শিখব তার, উল অথবা পাটের আঁশ দিয়ে।

প্রস্তুতপ্রণালি

প্রথমে ২৪ নং তার কেটে উলের কাঁটা বা যে-কোনো সরু কাঠির গোড়ায় তার আটকিয়ে বার বার ঘুরিয়ে স্প্রিং “তৈরি করি। স্প্রিং তৈরি শেষ হলে কাঠি থেকে স্প্রিং খুলে নিই। এবার স্প্রিংয়ের দুই মাথা দুহাতে ধরে টান দিয়ে আন্দাজমতো লম্বা করে নিই, স্প্রিং খুব বেশি ফাঁক না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখব। এবার ফুলের পাপড়ি যত বড় করতে চাই, তার দুইগুণ সমান স্প্রিং কেটে নেব।

ফেলনা জিনিস দিয়ে শিল্পকর্ম

ফেলনা উল বা পাটের আঁশ দিয়ে ফুল তৈরি

স্প্রিংয়ের দুমাথা আটকিয়ে পাপড়ির আকার করে নেব। এবার উল বা সুতা অথবা পাটের আঁশ স্প্রিংয়ের পাপড়ির গোড়ায় একমাথা বেঁধে অন্য মাথা ধরে একপাশ হতে অন্যপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সম্পূর্ণ পাপড়ি করব। উল বা সুতোর শেষ মাথা পাপড়ির গোড়ায় সোজা এনে বেঁধে দেব। এভাবে পাঁচটি পাপড়ি তৈরি করে নেব।

২০ নং তার ডাঁটা তৈরির জন্য আন্দাজমতো কেটে নেব। ডাঁটার মাথা সামান্য বাঁকিয়ে হলুদ বা পছন্দমতো উল বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে ফুলের রেণু বানিয়ে নিই। ঐ পাঁচটি পাপড়ি একের পর এক রেণুর নিচে বেঁধে ফুলটি তৈরি করি। বোঁটার সাথে সবুজ বা ব্রাউন সুতা বা কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেব। ফুলের পাপড়ির মতো করে একটি পাতা তৈরি করি। পাতাটি ডাঁটার সাথে আটকিয়ে দিই। ডাঁটাসহ একটি সুন্দর ফুল তৈরি হলো। এভাবে অনেকগুলো ফুল তৈরি করতে পারি। নিজের ঘরে ফুলদানিতে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারি অথবা বন্ধুদের উপহার দিতে পারি।

আরও দেখুন :

Leave a Comment